Mahabharat - Story Of Karna

The Mahabharata - Story Of Karna ( কর্নের জীবন কথা )

মহাভারতে কর্নের কথা নতুন কিছু নয়। কর্ন মহাভারতের নায়ক না হলেও  কর্নের দাম মহাভারতে নায়কের চেয়ে ও বেশী। একবার শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে কর্নের সম্পর্কে বলেছিল এমন যুগ পুরুষ কখনো কখনোই জন্মায়। এমনকি বেদ্ ব‍্যাস কর্নের বিবরন নীজের মুখে না বলে কর্নের মুখ দিয়ে ই বলা করিয়েছিলেন।
কর্নের জীবন বৃত্তান্ত :( birth story of karna )
যদুশ্রেষ্ঠ শূরের পুত্রী ছিল প্রীথা। শূর তার এই কন্যা কে তার নিসন্তান ভাই কুন্তীভোজ কে দিয়েছিল। কুন্তীভোজের নাম অনুসারে এই কন্যা র নাম হয় কুন্তী। একবার কুন্তীভোজ এর রাজ‍্যে তেজস‍্যি দূর্বাষা মুনি র পদার্পন ঘটে। রাজকুমারী কুন্তী দুর্বাষা মুনি র খুব পরিষেবা করে । পরিষেবার তুষ্ট হয়ে দুর্বাষা মুনি কুন্তী কে একটি মন্ত্র প্রদান করলেন । মন্ত্রের সাহায‍্যে কুন্তী যেকোনো দেবতা কে আহবান করে তার ঔরসে পুত্র সন্তান লাভ করতে পারবে। কিন্তু সঙ্গে দুর্বাষা মুনি কুন্তী কে সাবধান করেন যেনো কৌতূহল বশতঃ এই মন্ত্র না পরে নাহলে ফলের জায়গায় দুঃখ লাভ হবে।
কুমারী অবস্থায় কুন্তী একদিন সূর্য দেবকে প্রনাম করছিল এবং কৌতূহল বশত সেই মন্ত্রে সূর্য দেব কে আহবান করে এবং তার ঔরসে একটি তেজস‍্যি পুত্র সন্তান লাভ করে । কিন্তু তখনও কুন্তীর বিবাহ না হওয়ায় সে ধর্ম সঙ্কটে পরলেন। সর্য দেব কুন্তী র এই অবস্থা দেখে কুন্তীর কুমারীত্ব বজায় থাকার আশির্বাদ দিলেন , সঙ্গে কর্নকে একটি অভেদ‍্য কবজ ও কুন্ডল প্রদান করলেন।
এরপর কুন্তী কর্নকে একটি বাশের বেতে তে করে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিলেন।
সারথী কর্তৃক কর্নের দর্ত্তক : ( adopted by charioteer)
সেই সময় গঙ্গাতে সারথী অধিরথ ও তার স্ত্রী রাধা গঙ্গা স্মান করছিলেন এবং তারা  ভাসমান  পুত্র সন্তান দেখতে পেয়ে  দর্ত্তক নিলেন এবং নাম দিলেন কর্ন।
এবং মাতার নাম অনুসারে কর্নকে রাধে বলেও ডাকা হয়ে থাকে।
সামাজিক ব‍্যাবস্তা :( society rules)
বাল‍্যকাল থেকেই কর্নের দৈবগুন প্রকাশ পেতে থাকে। ধনুর বিদ‍্যায় সে পারদর্শী হয়ে ওঠে কিন্তু তখনকার সমাজে ধনুর বিদ‍্যার শিক্ষা শুধু মাত্র বাহ্মন ও খত্রীয়দের মধ‍্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই জন্য কর্নকে নিরন্তন সঙঘর্ষ করে যেতে হয়। মহামহিম ভীষ্ম ও কর্নকে ধনুর বিদ‍্যা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কর্ন সেই সমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিক্ষা লাভের আশায় দেশ বিদেশে ভ্রমণ করতে লাগে।
পরশুরাম কর্তৃক শিক্ষাদান :(parshuram as teacher)
শিক্ষা লাভের আশায় কর্ন প্রথমে বেদ অধ‍্যায়ন করে এবং তার পর অস্ত্র বিদ‍্যা লাভের আশায় গুরু দ্রোনাচার্যের কাছে যায় কিন্তু সেখানে ও সুত পুত্র বলে অপমানিত হওয়ার পর সেখান থেকে ভগবান পরশুরামের কাছে  যায়। ভগবান পরশুরাম কর্নের মধ্যে দিব‍্যতা অনুভব করে তাই কর্নকে জিজ্ঞাসা করে সে বাহ্মন কিনা যদি সে বাহ্মন হয় তবে ই সে শিক্ষা দেবে। সবার কাছে অপমানিত হওয়ার পর কর্ন নিজেকে বাহ্মন বলে দাবি করে এবং শিক্ষা লাভে ব‍্যাস্ত হয়ে যায়। শিক্ষা লাভ করা শেষ হলে  কর্নের সঙ্গে ইন্দ্র র যুদ্ধ হয় । যুদ্ধে ইন্দ্র পরাস্ত হয় এবং সেই প্রতিশোধে  ইন্দ্র চালাকি করে বীছার রূপ ধারন করে । সেই সময় কর্নের কোলে পরশুরাম নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন সেই সময় বীছার কামরে কর্নের পা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে কিন্তু গুরুর নিদ্রা ভগ্ন না হয় সেই জন্য  সেই ব‍্যাথা সহ‍্য করে বসেছিল । ভেজা রক্তে গুরুর  নিদ্রা ভগ্ন হলে সে বুঝতে পারে কর্ন ব্রাহ্মন নয় । সেই জন্য সে তাকে অভিশাপ দিল যে বিপদকালীন সময়ে  কর্ন তার সমস্ত বিদ‍্যা  ভূলে যাবে। কিন্তু পর মুহূর্তে  পরশুরাম তার ভুল বুঝতে  পারে এবং বিজয় ধনুষ দান করে । এই ধনুষের ফলে কর্ন  অজেয় । কিন্তু কর্ন এই ধনুষ কখনও ব‍্যাবহার করে নি একমাত্র শেষ যুদ্ধে  কর্ন এই ধনুষ ব‍্যাবহার করেছিল।
অঙ্গ রাজ কর্ন :
হস্তীনাপুরের ক্রীড়া প্রাঙ্গণে যখন  প্রজাগন অর্যুনের প্রশঙ্শায় পন্চমুখ সেই সময় গুরু দ্রোন অর্যুন কে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুরধর বলে । সেই সময় কর্নের প্রবেশ ঘটে এবং অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান দেয় এবং অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে বলে। সেই সময় কুল গুরু কৃপাচার্য ও বিদুর কর্নের ব ্শ পরিচয় জিগ্গেস করাতে জানতে পারে সে সারথি পুত্র  । সেই সময় রাজকুমার ভীম সহিত  সবাই তাকে অপমান করতে থাকে। সেই সময় দুর্যোধন কর্নের কাছে মিত্রতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং তাকে অঙ্গ প্রদেশের রাজা ঘোষণা করে। রাজা হওয়ার পর কর্নের সঙ্গে অর্জুনের যুদ্ধ হয় কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার যুদ্ধ স্থগিত হয়ে যায়। সেই থেকেই কর্ন ও অর্জুনের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ততায় পরিনত হয়। 
কর্নের দ্বিগবীজয়  : 
রাজা হওয়ার পর কর্ন  চার চার দ্বিগবীজয় এ বের হয় এবং প্রত‍্যেক রাজা কে পরাজিত করে । উল্লেখযোগ্য কোনো যুদ্ধেই কর্ন বিজয় ধনুষ  ব‍্যবহার করে নি। এবং রাজাদের মধ‍্যে মগধরাজ জরাসন্ধ কেও কর্ন পরাজিত করে।
দ্বৌপদীর সয়ম্বর :( marriage ceremony of droupodi)
দ্বৌপদীর সয়ম্বর এ শর্ত ছিল যে দিব‍্য ধনুষ  তুলে এবং ধনুষের প্রতিন্চা বেধে   আকাশে ভাসমান মাছের  ছায়া জলের মধ্যে তাকিয়ে যে মাছের চোখ বৃদ্ধ করবে তার গলায় দ্বৌপদী বরমাল‍্য পরাবে। সবাই জানতো এই  স্পর্ধা কেবল অর্জুন পুরন করতে পারবে। কিন্তু কৃষ্ণ গান্ধারী কে প্রথম থেকেই বলেছিল যে আর্য বর্তে দুজন ব‍্যাক্তি এই স্পর্ধা জিততে পারবে একতো অর্জুন আর দ্বিতীয় কর্ন । তাই যখন কোন রাজা ধনুষ তুলতে অসমর্থ হলো তখন কর্ন সেই ধনুষ তুলে তার উপর প্রতিন্চা বেধে লঞ্খ বেধ করতে যাবে তখন ই দ্বৌপদী সারথি পুত্র কে সে বিয়ে করবে না বলে লঞ্খ বেধ ক‍্যতে বারণ করে কারন সে প্রথম থেকেই অর্জুন কছ বিয়ে করবে বলে স্থীর করে রেখেছিল।
কর্নের স্ত্রী এর নাম :
দুবার বিবাহ হয়েছিল । কর্নের প্রথম স্ত্রী এর নাম ব্রুশালী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হল সুপ্রিয়া।
কর্নের সন্তানের নাম :
কর্নের সাতটি সন্তান ছিল  । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীমের হাতে  প্রথম সন্তান বানাসেনা মারা যায়। নকুলের হাতে সুসেনা, চিত্রসেনা ও সত‍্যসেনা,সুসর্মা মারা যায়। অর্জুনের হাতে ব্রসসেনা মারা যায় । একমাত্ৰ ব্রীসকেতু ই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বেচে থাকে।

অভিশাপ  : 
দুটি অভিশাপ কর্নের জীবনে অতপ্রত ভাবে জরিয়ে গেছিল ।
একটি পরশুরাম কর্তৃক  যেখানে বলা হয়েছে অত‍্যন্ত প্রয়োজনের সময় কর্ন অস্ত্র বিদ‍্যা ভূলে যাবে ।
দ্বিতীয়ত একটি ব্রাহ্মন কর্তৃক যেখানে বলা আছে যখন তার রথের চাকা মাটিতে বসে যাবে তখন তার মৃত্যু হবে এবং তখন সে রথের চাকা কোনো মতেই তুলতে পারবে না।
Karna
দানবীর কর্ন  :
সমগ্র বিশ্বে এবং সর্ব কালে লোকে কর্নকে দানবীরতার জন্য পূজো করে। একবার  শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিল কর্নের মতো দানবীর আর সমগ্র বিশ্বে কেউ নাই। প্রমাণ হিসেবে একটি সোনায় ভরা  পাহাড় কর্ন ও অর্জুন উভয় কেই দিয়ে বলেছিল এই পাহাড়ের সোনা নীজের পছন্দ মতো খরচ করতে পারে । অর্জুন সেই পাহাড়ের কিছু সোনা নীজের কাছে রেখে বাকি সোনা দান করছিল কিন্তু  কর্ন গোটা পাহাড় টাই জনগনের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে বলেছিল তারা তাদের প্রয়োজন মতো সোনা ব‍্যবহার করতে।
 কর্নের সবচেয়ে বড়ো দানের পরিচয় তার কবজ ও কুন্ডল এর দান।
কবজ ও কুন্ডল কর্নের শরীরের ই অ ্শ ছিল কিন্তু ইন্দ্র কবজ আর কুন্ডল দান চাওয়াতে তার বদলে কবজ ও কুন্ডল  দাষ করেছিল।
কর্নের মৃত্যু  :
পিতা মহ ভীষ্ম যুদ্ধ থেকে বিরত হওয়ার পর কর্ন যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল । সমস্ত পান্ডবকে পরাস্ত করার পর ও কাওকে হত্যা করেনি কারণ মাতা কুন্তী কে কথা দিয়েছিল যে সে কোনো পান্ডবকে হত্যা করবে না। যুদ্ধের অন্তিম দিনে যখন কর্নের রথের চাকা মাটিতে বসে যায় এবং সে তার বিদ‍্যা ভূলে যায় সেই সুযোগে অর্জুন ছল করে কর্নের শীরছেদ করে।

1 comment: